ঢাকা,বুধবার, ৮ মে ২০২৪

সরকারী ঔষধ বিক্রি করছে খোদ সরকারী ডাক্তার !

এম শফিউল আলম আজাদ :: কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে সরকারী ঔষধ বিক্রি করছে খোদ মাহফুজুর রহমান নামের
একজন সরকারী ডাক্তার। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছে উক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে, এমন কি তার স্ত্রী নিজেই বাদী হয়ে নিজ সন্তানকে অপহরণ পূর্বক গায়েব করে রাখার কারনে অপহরণ মামলাও করেছে ময়মনসিংহের ভৈরবের একটি আদালতে । তাছাড়া রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির শত শত অভিযোগ। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ সময় ব্যয় করছে।ডাক্তার মাহফুজুর রহমান পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত রয়েছে । সে সুবাদে নাইক্ষ্যংছড়ি বাজারের কবির টাউয়ারের নিচে খুলেছে ডক্টরস্ ল্যাব নামের একটি প্রতিষ্ঠান, কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডে খুলেছে ট্রমা সেন্টার এন্ড ল্যাব নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারী একজন ডাক্তার হয়ে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেদারসে কি ভাবে সরকারী সম্পদ ওপেন সিক্রেট বিক্রি করছে তা বোধগম্য নয় বলে জানান স্থানীয়রা।তার মতো অনেকেই ঈদগাঁওতে লাইসেন্স বিহীন রাতারাতি হাসপাতাল ক্লিনিক বসেছে প্রভাবশালীরা। জেলা সিভিল সার্জনের নজরদারির অভাবে যে যার মত করে এসব অপকর্ম করে গেলেও মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। ফলে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চলছে হাসপাতাল ক্লিনিক গুলো। অপচিকিৎসায় অহরহ নবজাতক ও প্রসূতি মারা গেলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সিভিল সার্জন এবং বিএমডিসি। জানা গেছে, ডাক্তার “মাহফুজুর রহমান” কাগজে কলমে সরকারী আবাসিক মেডিকেল অফিসার হলেও তার মুল ব্যবসা লাইসেন্স বিহীন গড়ে তোলা কথিত ক্লিনিকে। তার কর্মস্থল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও তার দেখা পায় না রোগীরা। ক্ষমতার অপ ব্যবহার করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এ ডাক্তার। যে খানে চাকরী করে অথবা ক্লিনিক খুলে বসে সেখানেই নারী নার্সদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে,এমনকি বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে তুলে বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী নারী। ঈদগাঁও বাসস্টেশনে গড়ে তোলা ট্রমা সেন্টার এন্ড ল্যাবে ভারুয়া খালীর এক নারী নরমাল ডেলিভারি করাতে আসলে অধিক টাকার লোভে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে এনেষ্টেশিয়া ছাড়া তাকে করানো হয় সিজার। যার ফলে ঐ গৃহবধুর জরায়ু কেটে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে কৌশলে ডাক্তার মাহফুজ নিজেই এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আইসিইউতে রাখার পর মারা যায় গৃহবধু মুর্তুজা আক্তার প্রকাশ মুক্তা। সুচতুর ডাক্তার মাহফুজ স্বাভাবিক মৃত্যুর (ডেড সার্টিফিকেট) নিয়ে মুক্তার স্বজনদের কাছে তুলে দেয়। এমন কি যাবতীয় খরচ ডাক্তার মাহফুজ নিজেই বহন করে দায় সেরে নেয়।বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে আসলে তার সাথে ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য নিতে ট্রমা সেন্টার এন্ড হাসপাতালে যাওয়া হয়। এ সময় তার নিজস্ব চেম্বারে একটি মিনি ফার্মেসীর আড়ালে ঔষুধের ঘর দেখা যায়। সেখানে সাংবাদিকদের চোখ গেলে দেখা যায় সরকারী বিভিন্ন নামের ঔষধ। এসময় ঔষুধ গুলোর ছবি তুলতে চাইলে বাধা প্রদান করেন ডাক্তার মাহফুজ। তাৎক্ষণিক জানতে চাইলে সরকারী ঔষধ আপনার হেফাজতে কেন ? নো প্রবলেম, এটা আমি নিয়মিত বিক্রি করি, সরকারী চিকিৎসকরা এসব সরকারী ঔষুধ বিক্রি করতে পারেন বলে জানান ডাক্তার মাহফুজ। ছবি উঠালে আপনার আপত্তি কোথায় জানতে চাইলে বলেন ঝামেলা আছে, বুঝেন না কেন। তারপরও কৌশলে সরকারী ঔষধসহ তার একটি ছবি তোলা হয় ।
পরে নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়,ডাক্তার আবাসিক মেডিকেল অফিসার হয়ে হাসপাতালে ১ ঘন্টার বেশি সময় দেয় না। অধিকাংশ সময় কবির টাউরের নিচে স্থাপিত ডক্টরস্ ল্যাবে বসে রোগী দেখতে দেখা যায় । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন রোগী গেলে তাকে কৌশলে তার নিজস্ব চেম্বারে পাঠিয়ে দেন বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী। নাইক্ষ্যংছড়ি চাকঢালা এলাকার বাসিন্দা মং ম চাক,জিয়াউল করিম নামের অহরহ ব্যক্তি জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের গাফেলতি এবং নজরদারির অভাবে ডাক্তার মাহফুজ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বান্দরবানের সিভিল সার্জনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী। অবৈধ ভাবে লাইসেন্স বিহীন ঈদগাঁওতে গড়ে তোলা “ট্রমা সেন্টার এন্ড ল্যাব হাসপাতাল” এবং সরকারী ঔষধ বিক্রির বিষয়ে জানতে কক্সবাজার সিভিল সার্জন আবদুল মতিনের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু সংযোগ ব্যস্থ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত: